বুরানো, ইতালি

ভেনিসের লাগুনে অবস্থিত বুরানো একটি ছোট দ্বীপ, যা উজ্জ্বল রঙের বাড়িগুলোর জন্য বিখ্যাত। জনশ্রুতি অনুযায়ী, ঘন কুয়াশার মধ্যে নিজেদের বাড়ি চিনতে সুবিধা হয় বলে স্থানীয় জেলেরা এই রঙিন বাড়ির সংস্কৃতি শুরু করেছিলেন। আজ এই বৈশিষ্ট্যই বুরানোকে ইতালির সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর জায়গাগুলোর একটি করে তুলেছে। সরু খাল, ছোট্ট ব্রিজ আর রঙধনু রঙের বাড়িঘর এক অনন্য দৃশ্য সৃষ্টি করে, যা সারা পৃথিবী থেকে পর্যটক ও ফটোগ্রাফারদের আকর্ষণ করে থাকে।

হাভানা, কিউবা

ক্যারিবীয় অঞ্চলের সবচেয়ে রঙিন শহরগুলোর একটি হলো কিউবার রাজধানী হাভানা। শহরটির ঐতিহাসিক কেন্দ্র “ওল্ড হাভানা” ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃত, যার ঔপনিবেশিক স্থাপত্য আজও টিকে আছে। ফিরোজা, প্রবাল, সরিষা আর পান্না রঙে আঁকা ভবনগুলো স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক আমলের একটি বর্ণাঢ্য শহুরে চেহারা তৈরি করে। আজও, স্থানীয়রা তাদের বাড়িগুলো উজ্জ্বল, আনন্দদায়ক রঙে রাঙিয়ে হাভানার প্রাণবন্ত সংস্কৃতিকে ধরে রাখছে।

চিংকুয়ে তেরে, ইতালি

চিংকুয়ে তেরে ইতালির লিগুরিয়া অঞ্চলের উপকূলজুড়ে ছড়িয়ে থাকা পাঁচটি ছোট মাছ ধরার গ্রাম নিয়ে গঠিত এক মনোরম অঞ্চল। প্রথমদিকে, সমুদ্র থেকে সহজে চেনার জন্যই ঘরগুলো উজ্জ্বল রঙে রাঙানো হতো। ধীরে ধীরে এটি এখানকার স্থাপত্যের একটি স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। সরু গলি, পাহাড়ের ঢালে বিস্তৃত আঙ্গুর বাগান এবং সাগরজুড়ে দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য—সব মিলিয়ে চিংকুয়ে তেরে ইতালির সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্যগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে।

শেফশাওয়েন, মরক্কো

শেফশাওয়েন হলো মরক্কোর রিফ পর্বতমালার একটি ছোট শহর, যা অসংখ্য নীল রঙের ছোঁয়ার জন্য পরিচিত। ১৫শ শতকে ইহুদি উদ্বাস্তুদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল ঘরবাড়ি নীল রঙে রাঙানোর এই প্রথা, যা আধ্যাত্মিকতা এবং আকাশের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি শহরটির পরিচয়ের অংশ হয়ে ওঠে। পাথরের পথ, খাড়া সিঁড়ি আর অসীম নীল দেয়াল শেফশাওয়েনকে দিয়েছে এক অনন্য রূপ, যা মরক্কোর সবচেয়ে চোখধাঁধানো শহরগুলোর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে।

কাম্পুং পেলাঙ্গি, ইন্দোনেশিয়া

সেমারাং শহরের কাছে অবস্থিত ছোট গ্রাম, ক্যাম্পুং পেলাঙ্গি, মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই জনপ্রিয় পর্যটনস্থলে পরিণত হয়েছে। ২০১৭ সালে স্থানীয় সরকার একটি পুনরুজ্জীবন প্রকল্প শুরু করে, যার আওতায় গ্রামজুড়ে বাড়ি, রাস্তা, সেতু সবই উজ্জ্বল রঙে রাঙানো হয়। এই প্রকল্প শুধু গ্রামটির চেহারাই বদলে দেয়নি, বরং পর্যটনের মাধ্যমে সেখানকার অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করেছে। বর্তমানে ক্যাম্পুং পেলাঙ্গি বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

লা বোকা, আর্জেন্টিনা

বুয়েনস আইরেস শহরের অন্যতম প্রতীকী এলাকা লা বোকা রঙিন ভবনগুলোর জন্য বিখ্যাত। ১৯শ শতকে এখানে অভিবাসী শ্রমিকেরা জাহাজের স্ক্র্যাপ দিয়ে বাড়ি তৈরি করতেন এবং বাকি পড়ে থাকা জাহাজের রঙ দিয়ে তা রাঙাতেন। এই বহুরঙা বাড়িগুলো ধীরে ধীরে এলাকাটির পরিচিত দৃশ্য হয়ে ওঠে এবং ‘কামিনিতো’ নামক মূল রাস্তাটি এক খোলা আকাশের নিচে অবস্থিত আর্ট গ্যালারিতে রূপ নেয়। বর্তমানে লা বোকা শুধুই একটি ঐতিহাসিক এলাকা নয়, বরং এটি স্ট্রিট আর্ট, গ্যালারি, হস্তশিল্প এবং লাইভ পারফরম্যান্সে ভরপুর এক রঙিন প্রাণকেন্দ্র।

গুয়াতাপে, কলম্বিয়া

গুয়াতাপে একটি ছোট শহর, যা এটির উজ্জ্বল রঙের বাড়ি এবং ভবনের দেয়ালে অলঙ্করণকৃত নকশার জন্য বিখ্যাত। ২০শ শতকে এখানকার বাসিন্দারা বাড়ির নিচের দেয়ালে নকশা আঁকতে শুরু করেন, যেখানে তাদের দৈনন্দিন জীবন, জাতীয় প্রতীক ও সাংস্কৃতিক বিষয়বস্তু উঠে আসে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই রঙিন দেয়ালগুলোই শহরটির প্রধান বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে গুয়াতাপে মনোরম রাস্তাঘাট ও স্বতন্ত্র কলম্বিয়ান রূপ নিয়ে পর্যটকদের মন জয় করে চলেছে।